করোনা রুখতে প্লাজমা থেরাপি।কি এই প্লাজমা থেরাপি।
করণা ভাইরাসের চিকিৎসা কার্যকর কোনো ঔষধ বা টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানান ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে Covid-19 আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাস এর চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে প্লাসমা থেরাপি। কি এই প্লাজমা থেরাপি?

প্লাজমা থেরাপি:
রক্তের জলীয় অংশকে বলা হয় প্লাসমা বা রক্ত রস, অনেকটা হালকা হলুদ রঙের মানুষের রক্তের প্রায় 55 ভাগই হলো প্লাজমা। জীবাণু সংক্রমিত রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা ব্যক্তির রক্তের প্লাজমা সংগ্রহ করে, একই রোগে আক্রান্ত অন্য রোগীর দেহে সেই প্লাজমা প্রবেশ করানো কেই বলা হয় কনভলোসেন্ট প্লাসমা থেরাপি।
আবিষ্কার:
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি বেশ পুরনো একটি পদ্ধতি।জার্মান চিকিৎসক এমিল ফন বেরিং ডিপথেরিয়া রোগের চিকিৎসায় সর্বপ্রথম প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষা চালান। এই পদ্ধতি আবিষ্কারের কারণে 1901 সালে তিনি সর্ব প্রথম ব্যক্তি হিসেবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ।
প্রয়োগ:
কোন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস এ আক্রান্ত হওয়ার পরে যারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে, তাদের শরীরে এক ধরনের এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।
সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন প্লাজমা আরেকজন অসুস্থ ব্যক্তির মধ্যে প্রবেশ করালে তার শরীর রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে ।
হাজার 1918 সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী ,1930 এর দশকে হাম এবং 1950 এর দশকে পোলিও চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছিল সাম্প্রতিক সময়ে ইবোলা এবং সারস ভাইরাস বাহিত রোগের চিকিৎসায়ও প্লাসমা থেরাপি কাজ করেছে।
প্লাজমা থেরাপির ধরণ:
প্লাজমা অনেক ধরনের এন্টিবডি থাকে ।কোন ব্যক্তি কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার শরীরে বিশেষ অ্যান্টি বডি প্রোটিন তৈরি হয় ।এই প্রোটিন ভাইরাসের চারপাশে এক ধরনের আবরণ তৈরি করে, ভাইরাসকে অকার্যকর করে।
plasma therapy
প্লাজমা থেরাপির উদ্দেশ্য হল একজনের শরীরের কার্যকর অ্যান্টিবডি অন্য রোগীর শরীরে স্থানান্তর করার মাধ্যমে দ্রুত রোগ দমন করা ।
কোভিড থেকে সুস্থ হওয়া একজন ব্যক্তির দেহ থেকে রক্ত রস সংগ্রহ করে ,নতুন আক্রান্ত কারো দেহে তা প্রয়োগ করলে নতুন রোগীর শরীরে, সহজেই কার্যকর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে পারে ।
কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার 14 দিন পরে একজন ব্যক্তি প্লাসমা দিতে পারে। সুস্থ ব্যক্তির শরীর থেকে সংগ্রহ করা প্লাজমা দুইজন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেওয়া স্বম্ভব।
চীনে করোনা ভাইরাসের মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষা শুরু হয় এই পদ্ধতির শতভাগ সাফল্য এখনো প্রমাণিত হয়নি।তার পরও বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতির সম্ভাবনা দেখছেন ।
চীন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে সফলভাবে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ হয়েছে, সেখানে সাফল্যের হারও বেশ ভালো ।এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্লাসমা থেরাপি প্রয়োগ এর অনুমোদন দিয়েছে।ভারত ও বাংলাদেশেও প্লাজমা থেরাপির ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
প্লাজমা থেরাপি দিলেই করনা আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হয়ে উঠবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। যেহেতু কোন ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখনও কোনো কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষকৃত হয়নি ।তাই এই পদ্ধতির ব্যবহারে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসকেরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্লাজমা থেরাপি কে শুধুমাত্র পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এবং গ্রহণের জন্য বেশ কিছু সতর্কতা রয়েছে।
প্লাজমা সংগ্রহ:
শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ একটি যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, এই মেশিন রক্ত থেকে শুধু রক্ত সংগ্রহ করে,রক্তের বাকি অংশ আবার দাতার শরীরে ফিরিয়ে দেয়।
প্লাজমার অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয় বিশেষ কিড, এই কিড বেশ ব্যায়বহুল ।একটি কিড দিয়ে 90 জনের প্লাজমার এন্টিবডি পরীক্ষা করা যায়।
বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের আইসিইউতে নেওয়ার আগে তাদের উপরেই থেরাপি চালানো হচ্ছে ।তবে অনেক গবেষকের দাবি করোনা আক্রমণের শুরুতেই প্লাজমা দেওয়া হলে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি ।
প্লাজমা দানের ক্ষেত্রে শারীরিক কোনো ঝুঁকি নেই। করোনাভাইরাস থেকে যারা সুস্থ হয়েছেন তারা, প্লাজমা দানের মাধ্যমে এগিয়ে আসলে আরো বহু রোগের উপকার হতে পারে।
One thought on “করোনা রুখতে প্লাজমা থেরাপি।কি এই প্লাজমা থেরাপি।”